Monday, 26 June 2023

১০ লাখ টাকার গরুর সাথে খাসি ফ্রি, জমে উঠেছে পশুর বাজার

১০ লাখ টাকার গরুর সাথে খাসি ফ্রি, জমে উঠেছে পশুর বাজার


খুলনা নগরের জোড়াগেট এলাকায় অবস্থিত পশুর হাটে এখনো বড় পরিসরে ব্যবসা শুরু হয়নি। তবে ধীরে ধীরে বাজার জমতে শুরু করেছে। ওই হাটে বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন পশু আনা হচ্ছে।

হাটের একটি গরু সবার নজর কেড়েছে। ২৭ মণ ওজনের গরুটির নাম রাখা হয়েছে 'বাগেরহাটের শান্ত'। বিক্রেতা দাম হাঁকাচ্ছেন ১০ লাখ টাকা। রোববার দুপুরে বাগেরহাট থেকে গরুটি হাটে নিয়ে আসেন মো. আব্দুল নকীব। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিক্রেতারা একটি গরুর সঙ্গে বিনামূল্যে একটি গরু দিচ্ছেন। নকিব জানান, এরই মধ্যে গরুটির দাম উঠেছে সাত লাখ টাকা।

নকিব জানান, শাহিওয়াল জাতের এই গরুটি তিনি ৪ বছর আগে ৮৯ হাজার টাকায় কিনেছিলেন। বর্তমানে গরুটির বয়স প্রায় সাড়ে চার বছর। গত বছরও গরুটি বাজারে আনা হয়েছিল। এরপর দাম ওঠে ৫ লাখ টাকা। দাম যায় সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত। এবার দাম চাওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকা। কেউ গরু কিনলে বিনামূল্যে খাসি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ওই গরুর পাশে আরেকটি বড় গরু। প্রায় ২০ মণ ওজনের ওই গরুর দাম আট লাখ টাকা। আবদুল মান্নান ওই হাটে তুলে নেন। নকীব ও মান্নানের বাড়ি একই এলাকায়।

সোমবার সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে দেখা যায় ওই দুটি গরুকে ঘিরে মানুষের ভিড়। কিন্তু ক্রেতা নেই। দর কষাকষি করে অনেকেই আসা-যাওয়া করে। বড় গরুর সংখ্যা তুলনামূলক কম, মাঝারি আকারের গরু বেশি। বিক্রেতারা আরও বলেন, এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা দামের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

এটিই খুলনার একমাত্র কোরবানির পশুর হাট। প্রতি বছর এক সপ্তাহের জন্য বাজারের আয়োজন করা হয়। খুলনা সিটি কর্পোরেশন দ্বারা পরিচালিত। এ বছর হাট বসবে ২২ জুন থেকে এবং চলবে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত। প্রতিদিনই খুলনা ও আশপাশের জেলা থেকে কোরবানির পশু নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। এবার জোড়াগেট মোড় থেকে ৬ নম্বর ঘাট পর্যন্ত বাজারের সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ওই বাজার থেকে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা।


চড়া দামের অভিযোগ

ওই হাটে গরু কিনতে আসা ক্রেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম অনেক বেশি। তাদের অভিযোগ, বিক্রেতারা গরুর দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন।

নগরীর শেখপাড়ার আলম চৌধুরী একটি মাঝারি আকারের গরু কিনছিলেন। গরুর দাম কমেছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। তিনি জানান, গত বছর একই ধরনের একটি গরু এক লাখ টাকার কম দামে কিনেছিলেন। এবার তার চেয়ে অনেক বেশি দাম কমেছে।

ওই হাটে বিক্রির জন্য ৫টি গরু নিয়ে আসেন মো. সায়েম সরদার। তার কাছে ৪ লাখ ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে। তিনি বলেন, গরুর দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি।


ট্রাক ও ট্রেলার গরুতে ভরা

২২ জুন পশুর হাট উদ্বোধন করা হলেও তখন পর্যন্ত তেমন পশু ছিল না। বিক্রিও হয়েছে খুবই কম। তবে গতকাল দুপুরের পর থেকে গরু-ছাগলসহ অন্যান্য পশু আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে বিক্রেতারা ট্রাক ও ট্রেলার বোঝাই পশু নিয়ে আসেন। হাটে গরুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

ওই হাটের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, আজ দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত মাত্র ১৪৬টি পশু বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে ৮৩টি গরু রয়েছে। পশু বিক্রি থেকে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা আদায় হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে হাটে পশুর সংখ্যা তত বাড়বে। এখন বিক্রেতারা অলস সময় কাটাচ্ছে বলে তাদের দম ধরার সময় নেই।

ভৈরব নদের ৬ নম্বর ঘাট নদী দিয়ে আসা প্রাণীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ওই ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু নিয়ে ট্রলার ছুটে আসছে। আজ দুপুর ১টা পর্যন্ত হাটে এসেছে ৬৮০টি গরু।

সেকেন্দার শেখ ঘাটে ট্রলারে করে নড়াইল থেকে আনা গরু খালাস করছিলেন। এবার তিনি দুটি গরু নিয়ে আসেন। তিনি জানান, চার বছর ধরে খুলনার হাটে গরু নিয়ে যাচ্ছেন। হারিও না. এবার তিনি গরু নিয়ে এলেন। ভালো দাম পাওয়ার আশায়।

ওই কুঁড়েঘরের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশনের উপাদান কর্মকর্তা (স্টেট অফিসার) মোঃ নুরুজ্জামানকে। তিনি বলেন, ঈদের দুই দিন আগে থেকে ঈদের সকাল পর্যন্ত মূল কেনাকাটা করা হয়। এর মধ্যে ঈদের আগে প্রায় সারারাত গরু কেনা-বেচা হয়। এখন বিভিন্ন এলাকা থেকে পশু আসতে শুরু করেছে। প্রতিবছরই হাট থেকে রাজস্ব আদায় বাড়ছে। এবারও সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হবে বলে মনে করেন তিনি।

নুরুজ্জামান আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জাল নোট শনাক্ত করতে বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। বাজারে ব্যাংকের শাখাও খোলা হয়েছে।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: